DSC_0115আজকের শিশু কিশোর তরুণেরাই ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির কর্ণধার। এদের গভীরে লুকিয়ে রয়েছে অশেষ সম্ভাবনা ও বিপুল সৃজনী প্রতিভা। কোমলমতি শিক্ষার্থীর অভ্যন্তরে স্ফুটনোম্মুখ মেধার সুষ্ঠু বিকাশ ও তার বহুমুখী সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের জন্য যথোপযুক্ত মাধ্যম প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানের বার্ষিকী এই অভাব অনেকাংশে পূরণ করে। শিক্ষার্থীর জন্য আত্মবিকাশের এমন একটি চমৎকার সুযোগ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দিতে পারছে বলে আমি গর্ববোধ করছি। একটি বার্ষিকী হল একটি প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কর্মকান্ডের দর্পণ। তাই এই বার্ষিকীর পাতায় প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন থেকে উত্তরণের দীর্ঘ ইতিহাসের সামান্য কিছু অংশ সুধী সমাজের অবগতির জন্য নিবেদন করতে চাই। বগুড়া শহরের উত্তর-পশ্চিমে নিশিন্দারা এলাকার অধিবাসীরা বরাবরই শিক্ষানুরাগী ও জ্ঞান পিপাশু অথচ অত্র এলাকায় ভাল কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়ের শিক্ষা বিশেষ করে নারী শিক্ষা উপেক্ষিত ছিল। এলাকার সন্তান হিসেবে আমাকে এ বিষয়টি গভীরভাবে পীড়া দিত। একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা সর্বদা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত। সুতরাং এলাকার জন্য কিছু একটা করা চাই-ই- এই অনুপ্রেরণা থেকেই আমার এক সময় মনে হয় অবশ্যই অত্র এলাকায় একটি ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। আমার এ ভাবনার সাথে তৎকালীন ব্যাটালিয়নের কমান্ডার শ্রী ধনঞ্জয় সরকার একমত পোষণ করেন এবং আমার এ মহতী উদ্যোগকে বাস্তবে রূপদানের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। জনাব ধনঞ্জয় বাব ব্যাটালিয়নের জন্য নির্ধারিত প্লানে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা আছে জানালে আমি এ সুযোগটা হাত ছাড়া না করে জনাব ধনঞ্জয় সরকারের সহযোগিতায় তাৎক্ষনিকভাবে সি,ও কে সভাপতি ও আমি সম্পাদক হয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ১৯৮৪ সালে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল নামের প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেই। পরবর্তীতে বগুড়া সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যস্ততার কারণে আমি উক্ত পদ থেকে অব্যহতি নেই এবং এলাকার জন্য তার দাবীর প্রেক্ষিতে আমার সহধর্মিনী তাহমিনা হায়দার উক্ত সদস্য সচিব পদে অধিষ্টিত হন। কিন্তু কিছুদিন পরে একটি বিশেষ মহল ম্যানেজিং কমিটির অজান্তে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের নামে শিক্ষার্থীদের বেতন একলাফে দ্বিগুণ করে বসেন। স্বাভাবিক ভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পরে এতদঞ্চলের গরীব নিম্নমধ্যবিত্ত অভিভাবকের উপর। বেতন জনিত কারণে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর পড়ালেখা বন্ধ হবার উপক্রম হয়। আমি তখন সদর উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সেই সময়ে এলাকার বঞ্চিত অভিভাবক, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আমার কাছে এসে তাদের সমস্যার কথা জানালে বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করি এবং এলাকার শিক্ষানুরাগী, সৎ ও সহানুভূতিশীল শিক্ষার আলো বিস্তারে সহযোগী কিছু ব্যক্তিবর্গ নিয়ে ১৯৮৬ সালের মহান বিজয় অর্জনের পবিত্র মাসে নিশিন্দারায় আমার জান্নাতবাসী মরহুম পিতা ফকির উদ্দিনের নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হই।
১৯৮৬ সালের ১২ ডিসেম্বর তিন কক্ষ বিশিষ্ট এক টিনসেড কাঁচাপাকা ভবনে মাত্র ৬৬ জন শিক্ষার্থী ও ছয়জন শিক্ষক নিয়ে আজকের এই বৃহদায়তনিক সুদৃশ্য প্রতিষ্ঠানটির শুভ সূচনা হয়-যা আজ প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মূখরিত। ১৯৮৭ ও ১৯৮৯ সালের এক জানুয়ারীতে বিদ্যালয়টি যথাক্রমে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার পরিসর বৃদ্ধি ও এলাকার সাধারণ মানুষের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়টিকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। ২০০১ সালে শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে কলেজ সাধারণ শাখার সাথে এইচ,এস,সি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বি.এম) শাখা খোলা হয়। দক্ষ গভার্নিং বডি ও শিক্ষক-শিক্ষিকার আন্তরিকতার কারণে ২০০০ এবং ২০০১ সালে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করে।
শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে এক সুদূর প্রসারী লক্ষ্য নিয়ে আমাদের যাত্রা। শিক্ষা ক্ষেত্রে সীমাহীন নৈরাজ্য ও দূর্নীতির আগ্রাসন রোধে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের মধ্য দিয়ে আমরা এবার পঁচিশ বছরে পা দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ করার যে স্বপ্ন আমি আজীবন লালন করেছি- তা যখন দোরগোড়ায় ঠিক সেই মূহুর্তে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হই। বিগত সাত বছর সংগত কারণেই আমি প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কার্যক্রম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিই; ফলে আমার সেই স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে। সম্প্রতি আমার জ্যৈষ্ঠ পুত্র অরূপ হায়দার সম্পদ আমার স্বপ্ন সার্থক করার লক্ষ্য নিয়ে গভর্নিং বডির দাতা সদস্য হিসেবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছে। বর্তমানে আমার শারীরিক অক্ষমতা হেতু আগের উদ্যোমে প্রতিষ্ঠানকে জোগান দিতে পারছি না। তাই স্বল্প দিনের মধ্যেই আমি তাকে আমার স্থলে অভিসিক্ত করে দ্বায়িত্ব অর্পণ করতে চাই। আমার বিশ্বাস যে, সে তার মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে আজীবন লালিত আমার স্বপ্নকে সার্থক করে প্রতিষ্ঠানটিকে তার স্বমহিমায় টিকে রাখতে পারবে। ইতিপূর্বে বগুড়ার এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন স্কুল ও কলেজের উদ্যোগে ২৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান থেকে একটি স্মরণীকা প্রকাশিত হয়েছে। যা ছিল একটি মহতী উদ্যোগ। আর সেই উদ্যোগের সাথে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তরিক উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে এখানেই ইতি টানছি।

 

(মোঃ হায়দার আলী)
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন সভাপতি
নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন স্কুল ও কলেজ, বগুড়া।